বিড়াল পালনে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি

                          বিড়াল, ধর্ম ও বিজ্ঞান 



বিড়াল একটি খুবই নিরীহ গৃহপালিত প্রাণী। বিড়াল বন্ধু সুলভ এক প্রাণী। গৃহপালিত এ প্রাণী খুব সহজেই মানুষের সাথে মিশে যতে পারে। সামান্য আদর- যত্ন আর খাবার দিলেই বিড়াল আপনার পোষ মেনে যাবে। অনেকেই বিড়াল পছন্দ করেন। এ-কারণে শখের বশে পুষে থাকেন। আবার অনেকে বিড়াল পছন্দ করেন না। তারা যদি জানতেন যে, যারা বিড়াল পুষেন তারা অন্যদের তুলনায় বেশি সুস্হ থাকেন।বিড়াল পালন করা একজন ব্যক্তির জন্য খুবই উপকারী। বিড়াল খুবই আরাম প্রিয়। তাই বিড়ালকে পালন করলে খুব সাবধানে যত্নসহকারে পালন করবেন। ওরা খুবই সেনসেটিভ প্রাণী। ওরা অল্পতেই কষ্ট পায় তাই খেয়াল রাখবেন তারা যেন মনে কষ্ট না পায়। আর বিড়ালের খাবারের ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে তারা যেন যথাযথ খাদ্য খেতে পারে। 

ধর্মীয় দিক থেকে উপকারিতা:ইসলামের দৃস্টিতে বিড়াল পালনে কোন অসুবিধা নেই। তবে বিড়ালকে পর্যাপ্ত খাদ্য পানীয় সরবরাহ করতে হবে। হাদিসে বর্ণিত আছে এক দিন রাসুল সা: ওযু করার জন্য এক পাত্রে পানি রেখেছিলেন এবং একটি বিড়াল এসে পাত্র থেকে পানি খাওয়া শুরু করলো আর মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সা: পাত্রটি কাত করে ধরনেল বিড়ালটিকে ভালোমতো পানি খাওয়ানোর জন্য। বিড়ালের পানি খাওয়া শেষে হযরত মুহাম্মাদ সা: সেই অবশিষ্ট পানি দিয়ে ওযু করলেন। এতেই বুঝা যায় বিড়াল কতো পবিত্র প্রাণী। 'মক্কাসহ অসংখ্য মসজিদে বিড়ালের অবাধ চলাফেরা সম্পর্কে জানা যায়। এরা প্রত্যেক ইবাদতকারীর পাশেই ঘুমায়। এরা মানুষের সাথে ঘেঁষে থাকে। সহি হাদিস মুসলিমে বর্নিত আছে বিড়ালকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এক নারীকে আজাব দেওয়া হয়েছিল। এবং তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে। কারণ ঐ মহিলা বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল এবং কোন খাদ্য দেয় নি এমনকি পোকামাকড় খেয়ে যে বিড়ালরি বেঁচে থাকবে সে ব্যবস্হাও করে রাখেনি। জিন বিড়ালের সাথে থাকার নেগেটিভ এনার্জিগুলোকে শোষন করতে পারে। যার ফলে বিড়াল ঘরে থাকলে সেখানে জিন আসার সম্ভাবনা নেই। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিড়ালের শরীরে এমন একটি ব্যাক্টেরিয়া দিয়েছেন যা কিনা আমাদের আসেপাশে থাকা সকল নেগেটিভ এনার্জিকে শোষন করতে পারে। হযরত মুহাম্মাদ সা: এর একজন সাহাবী বিড়াল খুব পছন্দ করতেন এবং পালন করতেন। ঐ সাহাবীকে হযরত মুহাম্মাদ সাঃ হুরায়রা বা বিড়ালের পিতা বলে সম্মোধন করেন। পরবর্তীতে ঐ সাহাবী আবু হুরায়রা  নামে পরিচিতি লাভ করেন।

বৈজ্ঞানিক দিক থেকে উপকারিতা : বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়াল পুষলে মানসিক চাপ কমে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিড়াল পোষেন, তাদের হৃদরোগের ঝুকি অন্যদের থেকে ৩০% কম।

বিড়ালের মিউ মিউ ডাক বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ধ্বনিগুলোর অন্যতম একটি, যা শরীরের পেশী ও অস্হির প্রদাহ নিরাময়ে থেরাপির মতো কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে বিড়াল ২০-১৪০ হার্জ শব্দ উৎপাদন করে। ফলে এটা অস্থিসন্ধি ও পেশির চিকিৎসায়  থেরাপি হিসেবে ভুমিকা রাখতে পারে।  

গবেষণা বলছে বিড়ালের উপস্হিতিতে ঘুম ভালো হয়।  মায়োক্লিনিক সেন্টার  ফর স্লিপ মেডিসিনের পরামর্শ  অনুযায়ী,  ঘুমের সঙ্গি হিসেবে বিড়ালকে রাখতে পারেন। বিড়াল গবেষক ড: জুন ময়াক নিকোলাসের গবেষণা অনুসারে  যেসব পুরুষ বিরাল পোষেন তারা খুবই স্মার্ট হন। ২০০২ সালে ন্যাশনাল হেলথ ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক বছরের নিচের যেসব শিশু বিড়ালের প্রেমে মগ্ন থাকে, তাদের বিভিন্ন ধরণের এলার্জি  হওয়ার সম্ভাবনা কম।  যখন কেউ বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটায় তখন তাদের দেহে প্রশান্তি ও আরামদায়ক রাসায়নিক পদার্থের নি:সরণ বৃদ্ধি পায়। ফলে ব্যক্তির রাগ উদ্বেগ ও মানসিক চাপ  নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে বিড়াল ঘরে থাকলে অশুভশক্তি বা আত্মা গৃহে প্রবেশ করতে পারে না। বিড়াল আপনার অবসর সময়ে খুব ভালো বন্ধু ও সঙ্গী হতে পারে। যখন আপনার মন খারাপ থাকে তখন বিড়ালের দুষ্টুমী ও আবদার আপনার মনকে প্রফুল্ল করে দিবে।


বিড়াল পোষণকে আরো উৎসাহিত করার জন্য বিড়াল দিবস পালন করা হয়ে থাকে বিভিন্ন দেশে। প্রতি বছর আগষ্টের ৮ তারিখে আন্তর্জাতিক বিড়াল দিবস পালন করা হয় বিশ্বব্যাপী। বিড়াল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাুষ ও বিড়ালের মধ্যে বন্ধুত্ব উদযাপনের লক্ষ্যে  বিশেষ এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে।

তাই আসুন আর দেরী না করে এখনই বিড়াল পোষা শুরু করে দেই। এবং নিজেদের অবসাদ দূর করি। ঘরকে ইঁদুর ও পোকামাকড় মুক্ত করে নিশ্চিতে ঘুমাই।

Comments

Popular posts from this blog

Pain of Animals